অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বাংলাদেশে প্রতি হাজারে অটিজম শিশু ১ দশমিক ৭ জন আর আর ৯ শতাংশ অটিজম শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে এক গবেষণায় প্রকাশ। এছাড়াও গ্রামের চেয়ে শহওে বাড়ছে অটিজম শিশুর সংখ্যাও। ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) এর পরিচালিত গবেষণায় এ তথ্য জানা যায়।
ইপনার গবেষণায় উঠে এসেছে, গ্রামে প্রতি ১০ হাজাওে ১৪ জন অর্থাৎ প্রতি হাজাওে এক দশমিক চারজন । এদিকে শহর এলাকায় প্রতি দশহাজারে ২৫ শিশু যা প্রতি হাজারে দুই দশমিক ৫জন অটিজম বৈশিষ্ঠ্য সম্পন্ন । তবে মেয়ে শিশুর চাইতে ছেলে শিশু অটিজম আক্রান্ত সংখ্যা প্রায় আড়াইগুণ বেশী।
তবে বর্তমানে দেশে ১৬-৩০ মাস বয়সের শিশুদেও মধ্যে অটিজমের হার প্রতি ১০ হাজারে ১৭ জন। সেই আনুপাতিক হারে প্রতি হাজারে এক দশমিক সাতজন। তবে এর সংখ্যা গ্রামের চেয়ে শহরেই অটিজম বৈশিষ্ট্য শিশুর সংখ্যা বেশী। তবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত অটিজম কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। রোগটি মানুষের হরমোনজনিত সমস্যা। এর প্রতিকী রং নীল। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের প্রত্যেকের পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য ও রয়েছে যেমন, তেমনি রয়েছে ভিন্ন প্রতিভা।
এদের মধ্যে কেউ হয়তো ভালো ছবি আঁকতে পারছে, কেউ বা টয়লেট ক্লিনিং করতে পারছে,সেটাও ওই শিশুর জন্যে একটা সাফল্য বলে খুশি থাকতে হবে। ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার এন্ড অটিজমের কনসালটেন্ট ডাক্তার সানজিদা আহমেদ বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর জন্যে কেবল মাকে নয়, বাবাকেও কোয়ালিটি সময় দিতে হবে। জিমনেসিয়াম, সুইমিং পুলে সপ্তাহে অন্তত একদিন বিশেষ শিশুদের জন্যে সুযোগ রাখা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, অভিভাবকদের কাউন্সিলিং দরকার। কারণ এই শিশুদের অভিভাবকরা ভালো থাকলে তাদের সন্তানটিটও ভালো থাকবে।
বর্তমানে মোট ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬০৮ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে যাদের মধ্যে ৪৭ হাজার ৪১৭ জন রয়েছে অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ব্যক্তি। আরও বলেন, বর্তমান সরকার অটিজমসহ সকল প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের উন্নয়নে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩’ এবং ‘নিউরো ডেভলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন ২০১৩’ নামে পৃথক দু’টি আইন প্রণয়ন করেছেন। যেখানে সরকারের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি কল্যাণমুখী দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে সাংবিধানিক অধিকারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ পেয়েছে।
এক তথ্যে জানা যায় সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় দেখা গেছে, অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে প্রায় ৯ শতাংশ শিশু কোনো না কোনো সময় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের টারশিয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অটিজমে আক্রান্ত ৪৫ শিশুর মায়েদের সাক্ষাৎকার নিয়ে দেখা যায়,৩-৯ বছর শিশুর প্রত্যেকেই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮দশমিক ৯ শতাংশই কোনো না কোনো সময় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
একইসঙ্গে দেশের গ্রামীণ এলাকায় ১ হাজার ৪১৬ জন ১১-১৭ বছর বয়সী শিশুর ওপর পরিচালিত আরেক গবেষণায় দেখা যায়, ছেলে- মেয়ে নির্বিশেষে বাড়িতে, স্কুলে এবং কর্মক্ষেত্রে ১৯ শতাংশ শারীরিক নির্যাতন, ১৭ শতাংশ মানসিক নির্যাতন এবং ৭৮ শতাংশ শিশু অবহেলার শিকার হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্টিক নিউরোডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজমের (ইপনা) চার বছর আগের এক তথ্য বলছে, প্রাপ্ত বয়স্কদের ছাড়াই দেশে তিন লাখের বেশি অটিজম আক্রান্ত শিশু রয়েছে। বর্তমানে সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে জানায় সংস্থাটি। যাদের বয়স দেড় থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।
এদিকে সরকারের ডিজঅ্যাবিলিটি ইনফরমেশন সিস্টেমের তথ্যানুসারে, দেশে বর্তমানে অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা ৭৮ হাজার ২১১ জন। তাদের মধ্যে ছেলে ৪৭ হাজার ৯১৪ জন, মেয়ে ৩০ হাজার ২৪১ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ৫৩ জন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে, হাসপাতালটির শিশু নিউরোলজি বিভাগে প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ অটিজম শিশু চিকিৎসা নিতে আসে। সে হিসেবে নতুন-পুরাতন মিলিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি অটিজমে আক্রান্ত শিশু চিকিৎসা নিতে আসে। জানা গেছে, বিএমএমএমইউ ছাড়াও সারা দেশের ৩৪টি মেডিকেল হাসপাতালে অটিজমে আক্রান্তদের চিকিৎসায় একটি করে শিশু বিকাশ কেন্দ্র রয়েছে। এর বাইরে অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ও প্রয়াসসহ আরও বহু প্রতিষ্ঠান বেসরকারিভাবে কাজ করছে।
মুন ফ্লাওয়ার অটিজম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মোঃ মফিজুল ইসলাম বলেন, অটিজমের মূল কারণ জেনেটিক। এছাড়া, আরও কিছু কারণ রয়েছে যেমন , পরিবেশগত কিছু সমস্যা, এছাড়া, শিশু যদি জন্মের সময় মাথায় আঘাত পায় বা জন্ডিস বা খিঁচুনি হয়ে থাকে তাহলেও অনেকসময় বাচ্চা অটিজমের শিকার হতে পারে।
Leave a Reply